অনলাইন ডেস্কঃ হজযাত্রাকে সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ করতে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালু করে হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পবিত্র হজ পালন সহজ করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে একটা সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ যেন আমরা সর্বোচ্চ কাজে লাগাই।একজন হজযাত্রীও যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন সে প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ হারিয়ে গেলে, অসুস্থ হয়ে পড়লে, লাগেজ হারিয়ে গেলে বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যায় করণীয় কী, কাকে জানাবে এটার সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে। হজযাত্রীদের সবার কাছে এই বুকলেট দিতে হবে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে সেটাও উল্লেখ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশেই একটি হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশ বসেই সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, ‘কল সেন্টারে যেসব অভিযোগ আসবে, সেগুলো এখান থেকে যেন সঙ্গে সঙ্গে মনিটর করা যায়। একটি ওয়েবসাইট করে দিতে হবে যেখান হজযাত্রীরা সবাই যুক্ত থাকবে। তারা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবে। কেউ হারিয়ে গেলে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার লোকেশন খুঁজে পাওয়া যাবে।’
ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য কলসেন্টারে কী ধরনের অভিযোগ আসছে সেগুলো মনিটর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘কী ধরনের অভিযোগ আসছে সেগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলতে হবে। এর মধ্যে কতগুলো সুরাহা হলো, কতগুলো হলো না সে তথ্য থাকতে হবে। এই অভিযোগগুলো যেন পরের বছর না আসে সে জন্য আলোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’ একই সঙ্গে কোনো এজেন্সি দায়িত্ব পালন না করলে তার লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা থেকে এজেন্সিগুলো রিভিউ করতে হবে। এজেন্সির প্রশিক্ষণ আছে কি না সেটা মনিটর করতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোতে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরি করে ফেলতে হবে। এই ক্যাটাগরির মান পূরণে যে এজেন্সিগুলো ব্যর্থ হবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেবেন।’
হজযাত্রীরা যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের করণীয় সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন এবং কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হন সেজন্য বিষয়ভিত্তিক ভিডিও তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘প্রবলেম সলভিং ভিডিও হতে হবে। অসুস্থ হয়ে পড়লে, হারিয়ে গেলে, কোরবানি দিতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে করণীয় কী এমন ভিডিও যাত্রীদের দেখিয়ে দিলে তারা মনোবল পাবেন। প্রস্তুত থাকতে পারবেন।’
এছাড়া, পরের বছর থেকে হজ ক্রেডিট কার্ড চালু ও লাগেজ ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যাগ কপি করে তালিকা করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘হজ ক্রেডিট কার্ড চালু করে দিলে হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমে যাবে। দেশে ফেরার পর যে কার্ডে যে অর্থ থেকে যাবে সেটা নগদ ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেজন্য চেক-ইনের পরে ট্যাগটা কপি করে রাখা যেতে পারে। ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে লাগেজ ট্যাগের তালিকা থাকবে।’
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এ বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ ছাড়া ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :